পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধির টিপস

সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের পোস্ট শুরু করছি। আশা করছি আপনারা সকলেই বেশ ভালো আছেন। আজকে আমাদের জুবিটেক এর স্পেশাল পোস্টটি ছাত্রছাত্রী অর্থাৎ যারা স্টাডি করছেন তাদের জন্য। কিভাবে লেখাপড়ায় নিজের মনোযোগ বৃদ্ধি করবেন জানতে চান? তাহলে এই পোস্টটি অবশ্যই ভালোভাবে পড়ুন। আশা করছি সবারই ভালো লাগবে।

আমাদের আজকের বিষয় হচ্ছে পড়ালেখা অর্থাৎ স্টাডি এবং আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের দেখাবো কি কি উপায়ে আপনি পড়ালেখায় নিজের মনোযোগ বৃদ্ধি করবেন এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

সঠিক নিয়ম মেনে চলুন

আমরা বেশিরভাগ সময় নিজের সুবিধা মতই পড়ালেখা বা পড়াশুনা করি। কিন্তু, এক্ষেত্রে আমরা যদি আরেকটু সচেতন হই এবং নির্দিষ্ট কিছু বিষয় মেনে চলি তাহলে খুব সহজেই নিজের মনোযোগ বাড়ানো যায়। তাহলে চলুন দেখে নিই কিভাবে নিজের মনোযোগ বৃদ্ধি করবেন নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনেঃ
১. পড়তে বসার আগে একটু চিন্তা করুন- কী পড়বেন, কেন পড়বেন, কতক্ষণ ধরে পড়বেন। প্রত্যেকবার পড়ার আগে কিছু টার্গেট ঠিক করে নিন। যেমন, এত পৃষ্ঠা বা এতগুলো অনুশীলনী।
২. বিষয়ের বৈচিত্র্য রাখুন। নিত্য নতুন পড়ার কৌশল চিন্তা করুন।
৩. এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আগ্রহের একটা সম্পর্ক আছে। এনার্জি যত বেশি মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর দিনের প্রথমভাগেই এনার্জি বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে পড়াটা দিনে ১ ঘন্টায় পড়তে পারছে সেই একই পড়া পড়তে রাতে দেড় ঘণ্টা লাগছে। তাই কঠিন, বিরক্তিকর ও একঘেয়ে বিষয়গুলো সকালের দিকেই পড়ুন। পছন্দের বিষয়গুলো পড়ুন পরের দিকে। তবে যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ রাতে পড়তে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে সেভাবেই সাজান আপনার রুটিন।
৪. একটানা না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়বেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ২৫ মিনিটের বেশি একজন মানুষ মনোযোগ দিতে পারে না। তাই একটানা মনোযোগের জন্যে মনের ওপর বল প্রয়োগ না করে প্রতি ৫০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতি নিতে পারেন। কিন্তু এ বিরতির সময় টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হবেন না যা হয়তো ৫ মিনিটের নামে দুঘণ্টা নিয়ে নিতে পারে।
৫. মনোযোগের জন্যে আপনি কোন ভঙ্গিতে বসছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সোজা হয়ে আরামে বসুন। অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া বন্ধ করুন। চেয়ারে এমনভাবে বসুন যাতে পা মেঝেতে লেগে থাকে। টেবিলের দিকে একটু ঝুঁকে বসুন। আপনার চোখ থেকে টেবিলের দূরত্ব অন্তত দু ফুট হওয়া উচিৎ।
৬. পড়তে পড়তে মন যখন উদ্দেশ্যহীনতায় ভেসে বেড়াচ্ছে জোর করে তখন বইয়ের দিকে তাকিয়ে না থেকে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে রুম ছেড়ে যাবেন না। কয়েকবার এ অভ্যাস করলেই দেখবেন আর অন্যমনস্ক হচ্ছেন না।
৭. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসুন এবং পড়তে বসার আগে কোনো অসমাপ্ত কাজে হাত দেবেন না বা সেটার কথা মনে এলেও পাত্তা দেবেন না। চিন্তাগুলোকে বরং একটা কাগজে লিখে ফেলুন।
৮. টার্গেট মতো পড়া ঠিকঠাক করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন, তা যত ছোটই হোক

আপনার স্মৃতিশক্তির যত্ন নিন

আপনি যদি ভালোভাবে পড়াশুনা করতে চান এবং এক্ষেত্রে নিজে আগ্রহী করে তুলতে চান তাহলে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত যা আপনার সৃতি শক্তির যত্ন নেবে এবং আপনার সৃতি শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে। তাহলে চলুন দেখে নিই কিভাবে আপনি নিজের স্রিতিশক্তি বাড়াবেনঃ
১। সবসময় ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করুন। এটা আপনার দেহ এবং মন দুটোর জন্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
২। রাগকে নিয়ন্ত্রন করুন। কখনোই কোন বিষয়ে অতিরিক্ত রেগে যাবেন না। অতিরিক্ত রাগ বেশিরভাগ সময়ই ক্ষতির কারণ হয়।
৩। মাঝে মাঝে মেডিটেশন করুন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। সম্ভব না হলে অন্তত সকাল-সন্ধ্যা খোলা ময়দানে হাঁটুন। এ অভ্যাসগুলো মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। স্মরণশক্তি মূলত নির্ভর করে আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতার ওপর। মেডিটেশন আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়।
৪। পর্যাপ্ত বিশ্রান নিন। অতিরিক্ত পরিশ্রম করবেন না। এতে আপনার মস্তিষ্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যা অবশ্যই ক্ষতিকর। তাই, কাজের ফাকে ফাকে বিশ্রাম নিন এবং একটানা কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

পড়া কিভাবে মনে রাখবেন? কিছু টিপস…

আমরা আমাদের মস্তিস্কের অতি সামান্য অংশই মাত্র ব্যবহার করে থাকি । শতকরা হিসেবে মাত্র ৫% থেকে ৭% । বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী তথা মেধাবী ব্যক্তিগণ সর্বোচ্চ ১৫% থেকে ১৮% মস্তিস্ককে কাজে লাগাতে পেরেছেন । বাকি বিশাল অংশ অলস বসে থাকে । এই বিশাল অলস মস্তিস্ককে কাজে লাগাতে পারলে মানুষ কি অসাধ্যই না সাধন করতে পারবে – একবার ভেবে দেখুন ।

১) নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন । সহজ কথায়, “আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে” ।
২) এখনই কাজ শুরু করুন, এখনই ।
৩) ঘুমের সময় নির্ধারণ করতে হবে । এবং তা করতে হবে আপনার “বায়োলজিক্যাল ক্লক” অনুযায়ী । নিয়মিত ও যথেস্ট ।
৪) সকাল হচ্ছে উত্তম সময় পড়ালেখা মনে রাখার । আরও অধিক উত্তম সময় হচ্ছে, সূর্যোদয়ের এক ঘন্টা পূর্বে ।
৫) প্রথমে শব্দ করে পড়তে হবে । এরপর ইচ্ছে হ’লে শব্দহীন ভাবে পড়তে পারেন ।
৬) প্রথমে সম্পূর্ণ বিষয়টি একবার/দু’বার মনযোগ সহকারে পড়ে তারপর দু’তিন লাইন করে মুখস্ত করুন ।
৭) একটানা অনেকক্ষণ পড়তে হ’লে মাঝখানে বিরতি দেয়া উত্তম । এক কিংবা দু’ঘন্টা পর পর অন্ততঃ পাঁচ মিনিট বিরতি দিতে হবে । এ সময় একটা গান শুনতে পারেন কিংবা সটান শুয়ে পড়তে পারেন ।
আর যদি আপনি ধর্মে বিশ্বাসী হন তাহলে আপনার ধর্ম নিয়ে ভাবুন এবং মুসলমান হলে আল্লাহর “জিকির” করুন ।
৮) পছন্দের তালিকায় মিস্টি জাতীয় খাবার রাখুন । চিনির শরবত, সাথে লেবু । কিংবা শুধু লেবুর শরবত । গ্লুকোজ পানিও পান করতে পরেন । সাবধান ! ডায়াবেটিক থাকলে অবশ্যই এসব পরিহার করুন । “স্যালাইন” কখনোই খাবেন না । খাবার তালিকায় সবুজ শাকসব্জি, ফলফলাদি রাখুন । স্বাভাবিক পুস্টিকর খাবার খেতে চেস্টা করুন । ধূমপান পরিহার করুন ।
৯) অল্প হলেও প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়ুন ।
১০) কম হলেও প্রতিদিন অন্ততঃ ৩০ মিনিট হালকা শরীরচর্চা করুন ।
১১) প্রতিদিন অন্ততঃ ৫/৭ মিনিট মন খুলে হাসুন ।
১২) অযথা কথা পরিহার করুন ।
১৩) অতিরিক্ত রাত করে ঘুমোতে যাবেন না ।
আমার আজকের লিখা এতদূর পর্যন্তই। আশা করছি সবারই ভালো লাগবে এবং পাঠকরা বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরা এই লিখার মাধ্যমে উপকৃত হবে। সবাইকে শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের এখানেই শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।
ভালো লাগলে দয়া করে করে ফেসবুক টুইটারে শেয়ার করুন এবং অন্যদেরও জানার সুযোগ করে দিন।এই পোষ্টটি এখান থেকে সংগ্রহিত।
- See more at: http://techgolpo.com/archives/19099#.VQmijN6wHLV

SHARE THIS

Author:

Previous Post
Next Post