গাজীপুর জেলা

গাজীপুর জেলা

  1. গাজীপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংশ্লেষে কালোত্তীর্ণ মহিমায় আর বর্ণিল দীপ্তিতে ভাস্বর অপার সম্ভাবনায় ভরপুর গাজীপুর জেলা । মোগল - বৃটিশ - পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে গাজীপুরের রয়েছে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা পর্বে গাজীপুরেই সংঘটিত হয় প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। গাজীপুরে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তরসহ ১৯টি কেপি আই, ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের একমাত্র হাইটেক পার্কসহ বহু সংখ্যক সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষুদ্র/মাঝারী ও ভারী শিল্প কারখানাসহ দেশের তৈরী পোষাক শিল্পের বিরাট অংশ। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা টংগীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়।[২]

    ভৌগোলিক সীমানা

    গাজীপুর জেলার উত্তরে ময়মনসিংহ জেলাকিশোরগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে ঢাকা জেলানারায়ণগঞ্জ জেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ জেলানরসিংদী জেলা এবং পশ্চিমে ঢাকা জেলাটাঙ্গাইল জেলা অবস্থিত।[৩]

    প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

    গাজীপুর জেলায় ৫টি উপজেলা রয়েছে; এগুলি হলোঃ
    এছাড়াও গাজীপুর শহরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন আছে।

    ইতিহাস

    ইতিহাস খ্যাত ভাওয়াল পরগণার গহীনবনাঞ্চল আর গৈরিক মৃত্তিকাকোষের টেকটিলায় দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক এ জনপদ ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ গাজীপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। [২]

    শিক্ষা

    বিশ্ববিদ্যালয়

    প্রত্নসম্পদ

    দর্শনীয় স্থান

    এছাড়াও কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের বাঁশতলী নামক গ্রামে সাম্প্রতিককালে ৩০০ বছরের পুরানো একটি সাদা পাকুড় গাছ আবিস্কৃত হয়েছে যা এ পর্যন্ত বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় নি। গাছটিকে ঘিরে পর্যটনশিল্প গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।[৫]

    বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

    আরও দেখুন

    তথ্যসূত্র


  2. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে জেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ৩ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

  3. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "জেলার পটভূমি"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৬ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

  4. [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

  5. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "পুরাকীর্তির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ৪ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

  6. ৩০০ বছর পর নামকরণ - দৈনিক কালের কন্ঠ (২৩ মে ২০১৫)

  7. http://www.dcgazipur.gov.bd/index.php?option=com_content&view=article&id=78&Itemid=88
নারায়ণগঞ্জ জেলা

নারায়ণগঞ্জ জেলা

নারায়ণগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ অঞ্চল যা মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। সোনালী আশঁ পাটের জন্য প্রাচ্যের ড্যান্ডি নামে পরিচিত। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে অবস্থিত একটি বিখ্যাত নদী বন্দর। দেশের সবচেয়ে ছোট জেলা।

ভৌগোলিক সীমানা

পূর্বে - ব্রাহ্মণবাড়িয়াকুমিল্লা, পশ্চিমে - ঢাকা, উত্তরে - নরসিংদীগাজীপুর এবং দক্ষিণে - মুন্সিগঞ্জ জেলা। ঢাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় পাললিক মাটি জাতীয় সমতল ভূমিতে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ শহর।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

নারায়ণগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরীণ মানচিত্র
২৯২ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জকে জেলা হিসেবে ঘোষনা করা হয় যা ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত । ১৮৮২ সালে নারায়ণগঞ্জকে মহকুমা ঘোষিত হয়, যা ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয়। ২০১১ সালের ৫ই মে নারায়ণগঞ্জ সদরকে সিটি কর্পোরেশন করা হয় ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ৭টি থানায় বিভক্ত। সেগুলো হল -
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলায় উপজেলা ৫টি। সেগুলো হল -
* মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৬৩টি,
* গ্রাম- ১৩৩টি, মহল্লা ৭৪টি।
* পৌরসভা - ০১টি- সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা।
* ৫টি ইউ,পি নিয়ে ডি.এন.ডি এলাকা গঠিত। এর আয়তন ৮,৫৪০ একর।
* সিটি কর্পোরেশন - ০১টি। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, বন্দর থানার কদমরসুল ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে এ কর্পোরেশন গঠিত হয়েছে)

ইতিহাস

১৭৬৬ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা বিকন লাল পান্ডে (বেণুর ঠাকুর বা লক্ষীনারায়ণ ঠাকুর নামে ও পরিচিত) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট থেকে এ অঞ্চলের মালিকানা গ্রহণ করেন। তিনি প্রভু নারায়ণের সেবার ব্যয়ভার বহনের জন্য একটি দলিলের মাধ্যমে শীতলক্ষা নদীর তীরে অবস্থিত মার্কেটকে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। তাই পরবর্তীকালে এ স্থানের নাম হয় নারায়ণগঞ্জ। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ নামের কোনো নগরীর অস্তিত্ব প্রাচীন বাংলার মানচিত্রে পাওয়া যায় না।
নারায়ণগঞ্জ নামকরণের পূর্বে সোনার গাঁ ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী। মুসলিম আমলের সোনার গাঁ নামের উদ্ভব প্রাচীন সুবর্ণগ্রামকে কেন্দ্র করেই। বহু অঞ্চলে মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ঢাকা নগরের অভ্যুদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিককেন্দ্র ছিল সোনার গাঁ। ফিরোজ শাহ চতুর্দশ শতাব্দির প্রায় প্রথমদিকে এই অঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়ে তা অন্তর্ভুক্ত করেন লখনৌতি রাজ্যের। এর ফলে ঘটে হিন্দু রাজত্বের অবসান। সোনারগাঁ লখনৌতি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহ-এর ক্ষমতালাভের (১৩২২) পূর্ব পর্যন্ত সময়ে সোনারগাঁয়ের গুরুত্ব সাময়িকভাবে কিছুটা কমে গেলেও এটি একটি বন্দর ও টাঁকশাল শহর হিসেবে গুরুত্ব পেতে থাকে। ১৩২৪ খৃস্টাব্দে গিয়াসউদ্দীন তুঘলক বাংলা অধিকার করে সাতগাঁও, লখনৌতি ও সোনারগাঁ- এই তিনটি প্রশাসনিক অংশ বা ইউনিটে বিভক্ত করেন। ১৩৩৮ থেকে ১৩৫২ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত সোনারগাঁ ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন রাজ্যের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ। তিনি সোনারগাঁয়ের শাসনকর্তা বাহরাম খানের সাহায্যকারী ছিলেন। ১৩৩৮ খৃস্টাব্দে সুলতানের মৃত্যু ঘটলে দিল্লী হতে নতুন শাসনকর্তা নিয়োগে বিলম্ব হলে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করে সোনার গাঁ অধিকার করেন। শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁ দখল করেন ১৩৫২ খৃস্টাব্দে। সেখান থেকে জারি করা হয় মুদ্রা। সুদুর বাগদাদ নগরী থেকে দিল্লী আধ্যাত্নিক সাধু সম্রাট শাহ ফতেহউল্লাহ্ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। পরবর্তীতে তাঁর মৃত্যুর পরে এখানেই কবরস্থ করা হয়। তার নাম থেকেই বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত সুফী সাধকের স্মৃতি বিজড়িত এক সময় পরগনা নামে পরিচিত এই এলাকার একটি অঞ্চল ফতেহউল্লাহ্ বা ফতুল্লা নামকরণ করা হয়।
মুসা খানের পতনের পর (১৬১১) সোনার গাঁ মুঘল সুবাহ বাংলার একটি সরকারে পরিণত হয়। সোনারগাঁয়ের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বের দ্রুত পতন শুরু হয় ঢাকার মুঘল রাজধানী স্থাপনের (১৬১০) পর থেকেই। সোনারগাঁয়ের একটি অংশে ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ থেকে বিংশ শতাব্দির প্রথমদিকে গড়ে উঠেছিল পানাম নগর। নানা স্থাপত্য নিদর্শন থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, বর্তমান পানাম নগর ও খাস নগরের মধ্যবর্তী এলাকার বিস্তৃত হিন্দু আমলের রাজধানী শহর মুসলিম আমলে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়নি, সম্ভবত এই স্থানে প্রথমদিকের মুসলিম শাসনকর্তাদের আবাসস্থল ছিল।
মোগল আমলেরও পূর্বে খিজিরপুর, কদমরসুল ও মদনগঞ্জ বাণিজ্যিক অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক নদীবন্দর ছিল। পলাশী যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর কাছে বাংলার শেষ নবাবের পরাজয়ের পর পর ইংরেজরা দল বেঁধে এ অঞ্চলে আসতে থাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের আশায়। সে সময় এ অঞ্চল পাট, লবণ ও বিভিন্ন ধরনের খাবার মসলার জন্য বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। রাজধানী ঢাকা ও সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে (শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপাড়) সড়ক ও জল পথের সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কোম্পানির লোকেরা শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম সড়কে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। একের পর এক নিম্ন জলাভূমি ভরাট করে গড়ে তোলে ঘরবাড়ি। কোম্পানির আগে মোগল সরকারের আমলে এই নদী বন্দর থেকে ব্যবসায়িক রাজস্ব আয় ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ টাকা ১০ আনা ৯ পয়সা। কোম্পানির আমলে ১৮৫০ সালে এই বন্দর থেকে ৩ কোটি গজ চট বস্ত্র ইউরোপ, আমেরিকায় রফতানি করে। তখন ১০০ চট বস্ত্রের মূল্যে ছিল ৭ টাকা। পলাশী যুদ্ধে যেসব ব্যক্তি ইংরেজদের সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিল তাদের প্রত্যেককে ইংরেজ সরকার পুরস্কৃত করে। এই সুবাদে বাংলা ১১৭৩ সালে ভীখন লাল ঠাকুর ওরফে লক্ষ্মী নারায়ণ ঠাকুর কোম্পানির নবাব মোজাফফর জঙ্গের (মহম্মদ রেজা খান) কাছ থেকে একটি দলিলের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ভোগস্বত্ব লাভ করেন। লক্ষ্মী নারায়ণ ঠাকুরের নামে উৎসর্গকৃত বলে এই অঞ্চলের নাম খিজিরপুর বদলিয়ে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় নারায়ণগঞ্জ। নরসিংদীর টোকবর্গী থেকে মুন্সীগঞ্জের মোহনা পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৫ মাইল শীতলক্ষ্যা নদী নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। ইংল্যান্ডের টেমস নদীর পর পৃথিবীর দ্বিতীয় ‘হারবার’ বেষ্টিত শান্ত নদী শীতলক্ষ্যা। এক সময় ইংল্যান্ডের ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধ তৈরির কাজে এই নদীর স্বচ্ছ সুশীতল পানি ব্যবহার করতো। কোম্পানি এ অঞ্চলকে আধুনিক শিল্প বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৮৭৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর লক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড় কদমরসুল, বন্দর ও মদনগঞ্জ এবং পশ্চিম পাড়ের মোট ৪.৫ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ঘোষণা দেয়া হয়। প্রথম পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মি. এইচটি ইউলসন। ১৮৬৬ সালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ের সঙ্গে ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু হয়। এ সময় রানারের মাধ্যমে ডাক সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। ডাক বিভাগের শাখা ছিল বরপা, হরিহরপাড়া, নবীবগঞ্জ, কাইকারটেক, শীতলক্ষ্যা, টানবাজার ও সোনারগাঁয়ের পানাম নগরীতে। ইংরেজরা তাদের নিজেদের ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করার জন্য ব্যক্তিগত এক্সচেঞ্জ বসিয়ে ১৮৭৭ সালে টেলিফোন সার্ভিস চালু করেন। ইংরেজরা তাদের একচেটিয়া বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বণিকদের উৎসাহিত করতে নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরকে ১৮৮০ সালে ফ্রিপোর্ট ঘোষণা দেয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নারায়ণগঞ্জের আগমনের পর পর উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকল্পনা অনুযায়ী নদী পথে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে সমুদ্র পথের চট্টগ্রাম বন্দর, কলকাতাসহ বিভিন্ন নদী পথে নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা চালু হয়। তখন কলকাতা ও আসাম থেকে যাত্রী এবং মালামাল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরে স্টিমার ভিড়তো। এ সময় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থান ভ্রমণের একমাত্র পথ ছিল নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর। এ জন্য নারায়ণগঞ্জকে বাংলা ভ্রমণের প্রবেশদ্বার বলা হতো। যাত্রী সাধারণের সুবিধার দিকে নজর দিয়ে ও মালামাল পরিবহন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন সার্ভিস চালু হয়। সব মেইল ট্রেন এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই ছেড়ে যেত। ফলে ভারতবর্ষের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শিল্প ও বন্দর নগরীর যোগাযোগ স্থাপিত হয়। স্থল পথ, জল পথ ও টেলিযোগাযোগের সুব্যবস্থার কারণে বিশ্ব বাণিজ্য বাজারে স্থান করে নেয়।
৫২ এর ভাষা আন্দোলন নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে স্বরণীয় ও বরণীয় এক অধ্যায়। যেহেতু নারায়ণগঞ্জ থেকে ২০ কিঃমিঃ অদুরেই অবস্থিত ঢাকা জেলা, তাই পার্শ্ববর্তী জেলা হিসেবে পাকিসত্মানী স্বৈরশাসককে উৎখাত করার জন্যই এ এলাকার জনগন ছিল প্রতিবাদমুখর। তৎকালীন ছাত্রনেতা শামসুজ্জোহা, বজলুর রহমান, বদরম্নজ্জামান, মফিজ উদ্দিন, হাবিব রশিদ, সুলতান মাহমুদ মলি­ক, কাজী মজিবুর , শেখ মিজান ও এনায়েত নগরের শামসুল হক প্রমুখের নের্তৃত্বে ভাষা আন্দোলনে স্বক্রীয় ভূমিকা নিতে সক্ষম হন। এখনও এ অঞ্চলের প্রতিটি মানুষ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে অমত্মরে ধারন করে প্রতিবৎসর ২১শে ফেব্রম্নয়ারী প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহন করেন।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক বলিষ্ট ভূমিকা ছিল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন সুসংঘঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার এম,এ গনি, মোহাম্মদ আলী, মোঃ নাসির উদ্দিন, মহিউদ্দিন রতন, নুরম্নল ইসলাম, মোঃ সামসুল হক, মমিনুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান প্রমুখ উলে­খযোগ্য। ফতুল্লার পঞ্চবটিতে ডালডার মিল নামের এলাকা ছিল পাকসেনাদের দখলে। প্রতিরাতে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে যুমনা জেটির কাছে নিয়ে আসত এবং গুলিবর্ষন করে হত্যার পরে লাশগুলো বুড়িগঙ্গা নদীর জলে নিক্ষেপ করে ভাসিয়ে দেওয়া হতো জানা যায়। মুক্তিযোদ্ধা দুলাল ও আমিনুর ডিক্রিরচর ও কানাইনগরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শক্তিশালী গ্রুপ তৈরী করেন। বাবুরাইলের মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল আশ্রাফ যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হন।

অর্থনীতি

নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর শিল্প এলাকা গড়ে উঠেছে শীতালক্ষা নদী তীর ঘেঁষে।
রপ্তানী শিল্পে পাট যখন বাংলাদেশের প্রধানতম পণ্য, তখন নারায়ণগঞ্জ "প্রাচ্যের ডান্ডি" নামে খ্যাত থাকলেও বর্তমানে নিট গার্মেন্টস ও হোসিয়ারী হোসিয়ারী শিল্পের জন্য সুপরিচিত। নিটওয়্যার রপ্তানীকারকদের সংগঠন "বিকেএমইএ" ও হোসিয়ারী শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রধান কার্যালয় "হোসিয়ারী সমিতি" নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। ফতুল্লা এনায়েতনগর এলাকায় অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ৭০০ গার্মেন্টস আছে। সারা নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রায় ১ হাজার রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস আছে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ গার্মেন্টসই নিট গার্মেন্টস। বর্তমানে নারায়নগঞ্জের তৈরী পোষাক রাজধানী ঢাকাতে ও বেশ সুনাম অর্জন করতে পেরেছে।
বর্তমানেও নারায়ণগঞ্জ পাট শিল্পের জন্য বিখ্যাত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী পাটকল নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত ছিল যা বর্তমানে বন্ধ করে আদমজী ইপিজেড গড়ে তোলা হয়েছে। পাট ব্যবসায়ী ও রপ্তানীকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন বা বিজেএ এর প্রধান কার্যালয় নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত।
দেশের প্রধান নদীবন্দর নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত যা শতবছরের পুরনো। সবচেয়ে বড় সারের পাইকারী বাজার নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। দেশের প্রধানতম লবণ কারখানা ও নির্মাণ সামগ্রীর পাইকারী বাজারের জন্য ফতুল্লা বিখ্যাত। এছাড়া লবন, গম, আটাময়দা পাইকারী ব্যবসা ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। দেশের প্রধানতম সিমেন্ট কারখানাগুলো সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা নদীর তীরজুড়ে গড়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জ উপজেলা ব্যতিত সকল উপজেলার প্রধান অর্থনীতি হলো কৃষি্।
রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও অঞ্চলের জামদানিমসলিনের কাপড় তৈরির ইতিহাস প্রায় সাড়ে ৪ শত বছরের পুরোনো। ইতিহাস খ্যাত মসলিন কাপড় প্রচীনকালে এখানে তৈরী হতো। মিশরের মমির শরীরে পেচানো মসলিন এই সোনারগাঁয়ের তৈরি বলে জানা যায়। বর্তমানে জামদানি শিল্প টিকে থাকলেও মসলিন শিল্প বিলুপ্ত।
নারায়নগঞ্জের চাষাড়া একালা জুড়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক ব্যবসা কেন্দ্র। এক কথায় বলা যায় চাষাড়া এখন নারায়নগঞ্জের প্রানকেন্দ্র।

চিত্তাকর্ষক স্থান

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে অবস্থিত লোকজ জাদুঘর
  • প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ, বারদী
  • বারদী বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম ও মন্দির
  • লাঙ্গলবন্দ স্নান ঘাট (পুন্য স্নানের জন্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুন্য তীর্থ -স্নান )
  • লাঙ্গলবন্দ প্রাচীন মন্দির
  • সাব্দী কালী মন্দির
  • সাব্দী মঠ
  • রাজা লক্ষী নারায়ণ মন্দির (১১৭৩)
  • লক্ষী নারায়ণ পুষ্কুরিনি
  • লক্ষী নারায়ণ কটন মিল
  • সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের সমাধি (১৩৯৩-১৪১১)
  • কাজী সিরাজউদ্দিনের সমাধি (১৩৯৩-১৪১১)
  • পাঁচ পীরের সমাধি
  • জয়বাবা লোকনাথ মন্দির (১৪০১)
  • বন্দর শাহী মসজিদ (১৪৮১)
  • বন্দর শাহী মসজিদ পুষ্কুরিনি বা "গায়েবানা পুকুর' (১৪৮১)
  • সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (১৪৮৪)
  • কাইকারটেক হাট
  • লর্ড ইংরেজ সাহেবের বাংলো (ধ্বংসাবশেষ )
  • বাবা সালেহর মসজিদ (১৫০৫)
  • বাবা সালেহর সমাধি (১৫০৬)
  • গোয়ালদী মসজিদ (১৫১৯)
  • কদম রসূল দরগাহ (১৫৮০)
  • কদম রসূল সুলতানি মসজিদ (১৫৮০)
  • কাঠ গোলাপ স্থান
  • গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা "সড়ক ই আজম "
  • সোনাকান্দা হাট
  • সোনাকান্দা দূর্গ (১৬৬০)
  • ত্রিবেণী ঈশা খান পরিখা (সোনারগাঁও থেকে সোনাকান্দা) (১৬৬০)
  • ত্রিবেণী পুল (১৬৬০)
  • হাজীগঞ্জ দূর্গ (১৬৬৩)
  • কেল্লার পুল (১৬৬৩)
  • ত্রিমোহনী পুল (১৬৬৬)
  • পাগলা পুল (১৬৬৬)
  • বিবি মরিয়মের সমাধি, তোরণ দ্বার, অভ্যর্থনাগার। (১৬৭৮)
  • বিবি মরিয়মের মসজিদ
  • আশরাফিয়া জামে মসজিদ, আমলাপাড়া
  • পানাম নগর, সোনারগাঁও
  • "কোম্পানি কুঠি" বা "নীল কুঠি"
  • সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর 
  • (অধুনা লুপ্ত) আদমজী জুট মিল
  • জিন্দা পার্ক
  • রাসেল পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা
  • মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
  • সাব্দী কালী মন্দির
  • লর্ড ইংরেজ সাহেবের কুঠি
  • বায়তুল আমান (১৯৩৯)
  • বোসে কেবিন (১৯৪২)
  • এ কে এম রহমত উল্ল্যাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট (১৯৫২)
  • বাংলার তাজমহল
  • বাংলার পিরামিড
  • কাঁচপুর সেতু
  • কাঞ্চন সেতু
  • সুলতানা কামাল সেতু
  • পূর্বাচল উপশহর
  • রূপায়ণ উপশহর
  • পন্ডস গার্ডেন
  • সোনাকান্দা স্টেডিয়াম
  • টি হোসেন গার্ডেন, বাগান বাড়ি।
  • জালকুড়ি বোট ক্লাব
  • নম পার্ক
  • মেরি এন্ডারসন (পর্যটনের ভাসমান রেস্তোরা)
  • এডভ্যানচার ল্যান্ড
  • জাতীয় ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম (৩য়), ফতুল্লা
  • রয়েল রিসোর্ট

শিক্ষা

নারায়ণগঞ্জ জেলায় আছে সরকারি বেসরকারি মোট ২০ টি কলেজ, ২০ টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়(একই সাথে স্কুল ও কলেজ),১২৬ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৪২৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

গণমাধ্যম

জাতীয় দৈনিকগুলোর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ হতে প্রকাশিত হচ্ছে প্রায়১৫টি দৈনিক, ৯টি সাপ্তাহিক পত্রিকা। এছাড়াও অসংখ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে। নিয়মিত প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাগুলো হলো দৈনিক শীতলক্ষ্যা, দৈনিক আজকের নীরবাংলা, দৈনিক খবরের পাতা,দৈনিক ডান্ডিবার্তা,দৈনিক দেশের আলো,দৈনিক সোজা সাপটা ,দৈনিক যুগের চিন্তা,দৈনিক সচেতন,দৈনিক নারায়ণগঞ্জের শতকথা, দৈনিক খবর প্রতিদিন, দৈনিক নারায়ণগঞ্জের আলো অনিয়মিত দৈনিক হলো সকাল বার্তা প্রতিদিন, দৈনিক কালের কথা। অনলাইন নিউজ পোর্টালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নিউজ নারায়ণগঞ্জ, প্রেস নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ টুডে, লাইভ নারায়ণগঞ্জ, যুগের চিন্তা।
উল্লেখযোগ্য সাংবাদিকদের মধ্যে : হানিফ খান, বংশী সাহা, নূর মোহাম্মদ, মজিবুর রহমান বাদল,মোমতাজ হোসেন, অহিদুল হক খান, হাবিবুর রহমান বাদল, ইউছুফ আলী এটম,কাশেম হুমায়ুন, রুমন রেজা,কবি হামিদ কাফি, নাফিজ আশরাফ, আবু সাউদ মাসুদ,শরীফউদ্দিন সবুজ, আব্দুস সালাম, এজাজ কোরেশী, আবুল হোসেন, প্লাবন রাজু, তোফাজ্জল হোসেন, রনজিৎ মোদক, বিল্লাল হোসেন রবীন, সীমান্ত প্রধান, আফজাল হোসেন পন্টি, রফিকুল ইসলাম, এমএএ খান মিঠু, আহসান সাদিক শাওন, আনোয়ার হাসান, তানভীর হোসেন, শরীফ সুমন, ইমাম হাসান স্বপন, মুজিবুল হক পলাশ, মনির হোসেন সুমন, কামাল হোসেন, গোলাম রাব্বানী শিমুল।


কৃতী ব্যক্তিত্ব

  • জ্যোতি বসু - সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ভারত
  • পারভীন সুলতানা দিতি - অভিনেত্রী
  • নিথর মাহবুব- মূকাভিনয় শিল্পী, সাংবাদিক
  • ব্ল্যাক আনোয়ার - অভিনেতা
  • খালেদ আল আমিন ছাত্তার - অভিনেতা।
  • মোনেম মুন্না - ফুটবলার
  • আবদুল্লাহ আল রাকিব - দাবা খেলোয়াড় (৪র্থ বাংলাদেশী গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাবধারী)
  • শাহরিয়ার হোসেন - ক্রিকেটার
  • আতহার আলী খান - ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার
  • মনোয়ার হোসেন শোভা - কমরেড, লেখক ও সাহিত্যিক
  • বেনজির আহমেদ - কবি ও লেখক
  • আলী আহাম্মদ চুনকা - প্রথম পৌর পিতা
  • খান সাহেব ওসমান আলী - ভাষা সৈনিক রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্ত
  • এ.কে.এম শামসুজ্জোহা, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্ত মরনোত্তর, সাবেক সংসদ সদস্য
  • এ.কে.এম নাসিম ওসমান, মুক্তিযোদ্ধা ও চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য
  • সেলিনা হায়াৎ আইভী - মেয়র
  • এ কে এম শামিম ওসমান -এমপি
  • এ কে এম সেলিম ওসমান - এমপি
  • আঃমতিন চৌধুরী - সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
  • আতাউর রহমান মুুুুকুল - চেয়ারম্যান বন্দর উপজেলা পরিষদ
  • ও এমপি।
  • সুফি মো: মিজানুর রহমান চৌধুরী,বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী এবং সুফি সাধক
  • এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ,সাবেক চেয়ারম্যান,বিআরটিসি
  • নাজমুল ইসলাম অপু ,ক্রিকেটার
  • গাজী লিয়াকত ,অধ্যাপক,লেখক,নাট্যকার
  • শাকিব খান ,অভিনেতা
  • সাজেদ আলী মিয়া ,এম.পি,শিক্ষানুরাগী
  • রেজাউল করিম আদিল- চলচ্চিত্র খল অভিনেতা
  • ইদ্রিস চৌধুরী - চলচ্চিত্র কৌতুক অভিনেতা
  • আশরাফউদ্দিন চুন্নু - জাতীয় ফুটবলার
  • সম্রাট হোসেন এমিলি- জাতীয় ফুটবলার
  • হাজী আবুল কাশেম- জাতীয় দলের গোলরক্ষক
  • ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা-ফুটবলার
  • দুলু আফেন্দী- কোচ
  • একেএম আব্দুল আলী-ভাষা সৈনিক ও শ্রমিক নেতা
  • মো. হাসান- ভাষা সৈনিক
  • মোস্তফা সারওয়ার- ভাষা সৈনিক ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় আনার অন্যতম উদ্যোক্তা

তথ্যসূত্র

কিশোরগঞ্জ জেলা

কিশোরগঞ্জ জেলা

  1. কিশোরগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। কিশোরগঞ্জ জেলার ব্র‍্যান্ড নাম হলো “হাওর বাওর মাছে ভরা, কিশোরগঞ্জের পনির দেশসেরা”

    ভৌগোলিক সীমানা

    কিশোরগঞ্জের ভৌগোলিক আয়তন প্রায় ২,৬৮৮ বর্গ কিলোমিটার। এই আয়তনে ১৩টি উপজেলা রয়েছে। এই জেলার উত্তরে নেত্রকোনা জেলাময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণে নরসিংদী জেলাব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলাহবিগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলাগাজীপুর জেলা

    প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

    কিশোরগঞ্জে উপজেলার সংখ্যা ১৩টি। যথা:
    ইউনিয়নের সংখ্যা :১০৬টি

    ইতিহাস

    বঙ্গদেশের প্রাদেশিক মানচিত্রটি ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত থাকা বৃহত্তর ময়মনসিংহ জিলা (টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জের সাথে বর্তমান বিভাগ) প্রদর্শন করছে
    কিশোরগঞ্জের ইতিহাস সুপ্রাচীন। এখানে প্রাচীনকাল থেকেই একটি সুগঠিত গোষ্ঠী আছে এবং এখনোও তা বিরাজ করছে। ষষ্ঠ শতকে বত্রিশ এর বাসিন্দা কৃষ্ণদাস প্রামাণিকের ছেলে নন্দকিশোর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন; এ গঞ্জ থেকেই কালক্রমে নন্দকিশোরের গঞ্জ বা 'কিশোরগঞ্জ'-এর উৎপত্তি হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শতকে পাল, বর্মণ ও সেন শাসকরা এ অঞ্চলে রাজত্ব করে। তাদের পর ছোট ছোট স্বাধীন গোত্র কোচ, হাজং, গারো এবং রাজবংশীরা এখানে বসবাস করে। ১৪৯১ সালে ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চল ফিরোজ শাহ-এর অধীনে থাকলেও কিশোরগঞ্জ সেই মুসলিম শাসনের বাইরে রয়ে যায়। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়কালে বেশিরভাগ অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর কোচ ও অহম শাসকদের অধীনে রয়ে যায়। ১৫৩৮ সালে এগারসিন্দুরের অহম শাসক মুঘলদের কাছে ও ১৫৮০ সালে জঙ্গলবাড়ির কোচ শাসক ঈসা খাঁর কাছে পরাজিত হয়। ১৫৮০ সালে বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ এগারসিন্দুরে আকবরের সেনাপতি মান সিংহকে পরাজিত করেন। ঈসা খাঁর মৃত্যুর পর জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর তার পুত্র মুসা খাঁর অধীনে আসে কিন্তু ১৫৯৯ সালে তিনি মুঘলদের কাছে পরাজিত হন।

    অর্থনীতি

    কিশোরগঞ্জের অর্থনীতির চালিকা শক্তি অনেকটা হাওরের উপর নির্ভর। যেমন: হাওরে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় যা দেশের চাহিদার লভ্যাংশ পূরণ করতে সক্ষম। তাছাড়া কিশোরগঞ্জে পাট, ধান এবং অন্যান্য অনেক সবজি হয়ে থাকে যা দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়।

    চিত্তাকর্ষক স্থান

    জঙ্গলবাড়ি দূর্গ
    জঙ্গলবাড়ি দূর্গ ছিল বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী। এটি কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি গ্রামে অবস্থিত। দূর্গের ভিতরে ঈসা খাঁ কয়েকটি স্থাপনা গড়ে তোলেন। ১৮৯৭ সালে ভুমিকম্পে দুর্গের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
    এগারসিন্দুর দূর্গ
    এগারসিন্দুর দূর্গ পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর গ্রামে অবস্থিত। গ্রামটি ব্রহ্মপুত্র নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। ইতিহাসবেত্তা আবুল ফজল রচিত আকবরনামা গ্রন্থে এই গ্রামের নাম উল্লেখ রয়েছে। এটি ছিল অহম শাসকদের রাজধানী। ১৫৩৮ সালে মুঘলরা অহমদের পরাজিত করে এ অঞ্চল দখল করে। এখানেই ১৫৮০ সালে বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহকে পরাজিত করে।
    শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান
    কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৬.৬১ একর জমিতে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতরঈদ-উল-আযহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কালের স্রোতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক স্থানে। ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া 'সাহেব বাড়ির' পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন।[২][৩][৪] ওই জামাতে ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই। অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে 'সোয়া লাখ' কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে এর নাম হয় 'সোয়া লাখি' । পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়।[৩] আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া_ সেখান থেকে শোলাকিয়া। পরবর্তিতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ এই ময়দানকে অতিরিক্ত ৪.৩৫ একর জমি দান করেন।[৫]
    চন্দ্রাবতী মন্দির
    চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত প্রথম বাঙালি মহিলা কবি স্মৃতিবিজরিত শিবমন্দির। এটি কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত।
    দিল্লীর আখড়া
    দিল্লীর আখড়া মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে নির্মিত। এটি মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত।
    মানব বাবুর বাড়ি
    মানব বাবুর বাড়ি হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া গ্রামে অবস্থিত। ১৯০৪ সালে জমিদারির পত্তন হলে ব্রিটিশ জেপি ওয়াইজের কাছ থেকে জমিদারি কিনে নেন গাঙ্গাটিয়ার ভূপতিনাথ চক্রবর্তী। সেখানেই তিনি এই বাড়িটি নির্মাণ করেন।

    নদ-নদী

    • পুরাতন ব্রহ্মপুত্র
    • মেঘনা
    • কালনী
    • ধনু
    • নরসুন্দা
    • বাউরি

    যোগাযোগ ব্যবস্থা

    কিশোরগঞ্জের যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নতমানের। রাজধানী ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। সড়ক অথবা রেলপথের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যায়।স্থানীয় প্রশাসন আরএইচডি, এলজিইডি ও পৌরসভা সকল রাস্তা তদারকি করে থাকে।ঢাকা হতে কিশোরগঞ্জ পৌঁছাতে বাসযোগে ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা।
    বাস যোগাযোগ ছাড়াও কিশোরগঞ্জের সাথে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগও অত্যন্ত ভাল। ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিনি সকাল 8.00 টায় এগারসিন্দুর প্রভাতি এক্সপ্রেস নামে একটি আন্ত:নগর ট্রেন বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ছাড়া নিয়মিত চলাচল করে। ট্রেনটি দুপুর 12:30 মিনিটে কিশোরগঞ্জ স্টেশনে পোঁছার পর পুণরায় 12:45 মিনিটে এগারসিন্দুর গোধূলী নামে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এবং ঢাকায় পোঁছার পর সন্ধ্যা 6:20 মিনিটে এগারসিন্দুর গোধূলী নামে ঢাকার কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ ট্রেনটি রাত এগারটায় কিশোরগঞ্জ পোঁছার পর পরদিন সকাল 6:45 মিনিটে এগারসিন্দুর প্রভাতি এক্সপ্রেস নামে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

    সংবাদপত্র

    দৈনিক
    • দৈনিক আজকের দেশ
    • গৃহকোণ
    • ভাটির দর্পণ
    • প্রাত্যহিক চিত্র
    সাপ্তাহিক
    • আর্যগৌরব (১৯০৪)
    • কিশোরগঞ্জ বার্তাবাহ (১৯২৪)
    • আখতার (উর্দু, ১৯২৬)
    • কিশোরগঞ্জ বার্তা (১৯৪৬)
    • প্রতিভা (১৯৫২)
    • নতুন পত্র (১৯৬২)
    পাক্ষিক
    • নরসুন্দা (১৯৮১)
    • গ্রামবাংলা (১৯৮৫)
    • সৃষ্টি (১৯৮৬)
    • সকাল (১৯৮৮)
    • সূচনা (১৯৯০)
    • কিশোরগঞ্জ পরিক্রমা (১৯৯১)
    • মনিহার (১৯৯১)
    • কিশোরগঞ্জ প্রবাহ (১৯৯৩)
    • বিবরণী (কুলিয়ারচর, ১৯৯৩)
    মাসিক

    কৃতী ব্যক্তিত্ব

    এ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ,সাবেক সংসদ সদস্য।

    তথ্যসূত্র


  2. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে কিশোরগঞ্জ"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪

  3. দৈনিক আজকের খবর

  4. "সরকারি ওয়েবসাইট"। ১০ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৬

  5. ময়মনসিংহ জেলায় ইসলাম, লেখকঃ মোঃ আবদুল করিম, প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠাঃ ১২৫-১২৮

  6. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন